IQNA

গাযায় মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) কেন অস্থায়ী  ভাসমান জেটি ও বন্দর বানাচ্ছে  ?

0:25 - March 23, 2024
সংবাদ: 3475264
ইকনা: শুভাকাঙ্খী হয়ে  মহৎ উদ্দেশ্যে ( যেমন : গাযায় যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ উদ্বাস্তু দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদের কাছে মানবিক ত্রাণ সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় রসদ পত্র সরবরাহের জন্য ) মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এ ধরনের বন্দর নির্মাণ করছে না বরং এর পেছনে রয়েছে বিরাট বড় গভীর ষড়যন্ত্র এবং ভয়ঙ্কর নোংরা ও অশুভ উদ্দেশ্য। আর সেটা হচ্ছে এ ধরনের কাজ করে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী গণহত্যাকারী ইসরাইলকে তার যাবতীয় অপরাধ, দুষ্কর্ম ও গণহত্যায় সর্বাত্মক সাহায্য, সহায়তা ও সমর্থন দান করে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)বিশ্বে যে দুর্নাম কামিয়েছে ও ধিক্কার পেয়েছে তা থেকে অব্যাহতি পাওয়া এবং র্্যাম্বো ও ম্যাক গাইভার স্টাইলে হলিউডের ফিল্মী হিরোর মতো হিরো সেজে জেটি ও বন্দর নির্মাণ করে গাযায় কিছু ত্রাণ সামগ্রী ও সাহায্য পাঠিয়ে বিশ্ব জুড়ে সস্তায় বাহ্ বাহ্ ও সুনাম কুড়ানো এবং বিশ্ববাসীর আই ওয়াশ করানো ।

প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে অনেকেই মাযুরার ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) এ উদ্যোগের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ , এতে করে গাজাবাসীদের দু:খ - কষ্ট , যাতনা - যন্ত্রণা , দুর্দশা ও সমস্যার তেমন কিছুই সমাধান হবে না । বরং এ ধরনের জেটি ও বন্দর নির্মাণ না করে মিসর - গাযা সীমান্ত খুলে দিয়ে খাদ্য সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় রসদ পত্র সড়ক পথে গাযায় আসতে দিলে তাতে ইসরাইলের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত গাযাবাসীদের সবচেয়ে বেশি উপকার হত এবং এটা হলে গাযায় প্রয়োজনীয় খাদ্য ,ঔষধ - পথ্য ও ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ ও বন্টন প্রধানতঃ মুসলিম দেশগুলোর তত্ত্বাবধানে থাকত । কিন্তু মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) পশ্চিমা দেশগুলো ও ইসরাইল সেটা চায় না । তাই সব সময় ইসরাইল মাযুরার ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও পশ্চিমাদের সমর্থন ও সবুজ সংকেত পেয়ে মিসর - গাযা সীমান্ত খুলে না দিয়ে উল্টো হামলা চালিয়ে খাদ্য , ঔষধ ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে দেয় নি বা দিচ্ছে না।
    আর মাযুরার ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) তত্ত্বাবধানে নির্মিত জেটি ও বন্দরে যে যৎ কিঞ্চিৎ ত্রাণ সামগ্রী ও সাহায্য গাযায় পাঠানো হবে তা পুরোটাই মাযুরার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং তা হবে পুরোপুরি ইসরাইলের স্বার্থানুকূলে । এভাবে ত্রাণ সামগ্রী ও সাহায্য পৌঁছানোর বিষয়টি মাযুরার হাতে থাকলে ত্রাণ সামগ্রী ও সাহায্য বিতরণকে কেন্দ্র করে গাজাবাসীদের মধ্যে বিভেদ , বিরোধ , দ্বন্দ্ব , বিভাজন ও সংঘর্ষ বাধাতে পারবে বেশি করে মাযুরা ও ইসরাইল।  খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বন্টন নিজের হাতে রেখে গাজাবাসী ও হামাসের মধ্যেও বিভাজন , ব্যবধান , ফাটল ও দূরত্ব সৃষ্টির ইন্ধন যোগাবে তখন 
মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) , ইসরাইল ও পশ্চিমারা । আর এ ভাবে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ও পশ্চিমারা গাযার উপকূলে জেটি ও বন্দর নির্মাণ করে ঘাঁটি বানিয়ে গাযায় হামাসের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের ইতি টানা বা তা খর্ব করারও চেষ্টা করবে বা এটা হবে গাযায় হামাসের শাসনের পতন ঘটানোর পূর্ব প্রস্তুতি মূলক পদক্ষেপ । কারণ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর বাহানায় মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) গাযার সমুদ্র সৈকত ও উপকূলীয় অঞ্চলে ডেরা বেঁধে ও ঘাঁটি গেড়ে গাযায় নিজের সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত  ও গাযার সমুদ্রোপকূল নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে । আর এটা করে যুদ্ধে শ্রান্ত ক্লান্ত ব্যর্থ ইসরাইলকে গাযায় আগ্রাসন ও যুদ্ধে আরো ব্যাপক ভাবে সামরিক ও গোয়েন্দা সাহায্য ও সহায়তা দান করতে পারবে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) । কারণ , মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) , পশ্চিমা দেশগুলো এবং ইসরাইলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কেবল একটাই। আর তা হলো হামাস ও  ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন সহ ফিলিস্তিনীদের বিশেষ করে গাজাবাসীদের সমূলে নিধন ও উচ্ছেদ । আর ত্রাণ সামগ্রী ও সাহায্য দেওয়ার বাহানায় গাজাবাসীদেরকে গাযার পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ সমুদ্রোপকূলে উক্ত বন্দরের দিকে নিয়ে আসা যাতে করে উত্তর , পূর্ব ও দক্ষিণ গাযা যা ইসরাইলের সীমান্ত সংলগ্ন তা যেন জনশূন্য হয়ে যায় এবং এটা করতে পারলে গাযা সীমান্ত সংলগ্ন ইসরাইলের শহর ও জনপদ সমূহের নিরাপত্তাও তখন সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই বন্দরের আশে পাশে গাজাবাসীদের আনা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে ( পরবর্তী পর্যায় ও ধাপে ) গাযাবাসীদের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেবে বা পাঠানোর উদ্যোগ নেবে মাযুরা ও পশ্চিমা দেশগুলো। অর্থাৎ মাযুরা কর্তৃক গাযায় এ বন্দর নির্মাণ ভবিষ্যতে গাযাকে জনশূন্য করা সংক্রান্ত ইসরাইলী - মাযুরীয় ( মার্কিন ) গোপন মহাপরিকল্পনার অংশও হতে পারে। আর ইসরাইল , মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) এবং ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরনে আগ্রহী কতিপয় আরবদেশেরও ইচ্ছা গাযা জনশূন্য করে চিরতরে হামাস সহ ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলনের ইতি টানা ।

md shamim, [23.03.24 00:23]
গাযায় বন্দর নির্মাণ করে উপকূল নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে সমুদ্রপথে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলনের কাছে রসদ পত্র এবং সামরিক ও লজিস্টিক সাহায্য পৌঁছুতে দেবে না মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) ; কারণ গাযার সমুদ্রোপকূল মাযুরার ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) নিয়ন্ত্রণে। আর তাতে মাযুরার দৃষ্টিতে হামাস ও ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন সামরিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাবে এবং ইসরাইলের এতে প্রভুত লাভ হবে !! 
      গাযার সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে গ্যাসের খনি রয়েছে এবং গাযার যে স্থানে উক্ত জেটি ও বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) সেখানেই গ্যাসের খনি অবস্থিত। আর সাহায্য ও ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করার নামে গাযায় সমুদ্র বন্দর যা আসলে মাযুরার সামরিক ঘাঁটি ছাড়া আর কিছুই নয় তা নির্মাণ করে গাযার তেল ও গ্যাস খনি দখল ও করায়ত্ত করার চেষ্টা করবে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) । আর এ কারণেই মিসর - গাযা সীমান্ত পথে গাযায় খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে বাঁধা দিচ্ছে ইসরাইল । " গাযায় ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য ও ওষুধ প্রেরণ আশু ও তীব্র প্রয়োজন । " - এ ধরনের জিগির তুলে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের নামে গ্যাস ক্ষেত্র  দখলের জন্য বন্দর নির্মাণ করছে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) । ত্রাণসামগ্রী খাদ্য ঔষধ ইত্যাদি সরবরাহের জন্য মিসর -গাযা সীমান্ত খুলে দিলে গাযা উপকূলে সমুদ্র বন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা আর তখন বিদ্যমান থাকে না । আর এমতাবস্থায় গাযার তেল - গ্যাস লুণ্ঠনেরও মোক্ষম সুযোগ বিদ্যমান থাকবে না মাযুরার জন্য । যেহেতু গাযা এলাকা ইসরাইল ও মাযুরার আধিপত্য প্রতিরোধ ও চ্যালেঞ্জকারী , যেহেতু অত্র অঞ্চলে ( লেবানন ও সিরিয়া  ) প্রতিরোধ আন্দোলন সক্রিয় , প্রবল ও সফল এবং ইসরাইল পর্যদুস্ত ও ব্যর্থ  সেহেতু ইসরাইল কে বাঁচাতে মাযুরা নিজেই গাযায় এই বন্দর নির্মাণ করে সেখানে ১০০০ সৈন্য মোতায়েনের পাঁয়তারা করছে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে আসাদ বিরোধীরা ( যাদের সবাই ছিল মাযুরা [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ] সমর্থিত তারা ) পরাজিত হলে সিরিয়ার তেল সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে সংখ্যালঘু কুর্দীদের রক্ষার নামে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে ও তা দখল করে নিয়ে সেখান থেকে তেল চুরি করছে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) । আর তেল ও গ্যাসের খুবই তীব্র প্রয়োজন মাযুরা ও পশ্চিমাদের । নাকে তেল - গ্যাসের গন্ধ গেলেই পশ্চিমাদের বিশেষ করে মাযুরার ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) মাথা ঠিক  থাকে না। আর ইউক্রেন - রাশিয়া যুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রুশ তেল ও গ্যাসের সরবরাহ তলানিতে চলে গেলে পশ্চিমাদের বিশেষ করে মাযুরার ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) তেল গ্যাসের অভাব বোধ অনেক তীব্রাকার ধারণ করেছে। আর এই সুবাদে যদি মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জেটি ও বন্দর নির্মাণ করে গাযার গ্যাস ক্ষেত্র নিজের কন্ট্রোলে নিতে পারে তাহলে তা হবে মাযুরার জন্য খুবই লোভনীয় লাভজনক প্রোজেক্ট !! 
    এই অঞ্চল ( পশ্চিম এশিয়া যা যুরা [যুক্তরাজ্য] প্রায় একশো বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য নাম করণ করেছিল) তিন মহাদেশের ( এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ ) সংগম স্থল  হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের ওপর সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো আধিপত্য ও কর্তৃত্ব কায়েম ও তা ধরে রাখতে চায়। আর সেটার জন্য চাই ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে জেটি ও বন্দর এবং গাযা হচ্ছে সেই কাঙ্খিত উপযুক্ত জায়গা । 
       অতএব বিবিধ কারণে এবং জঘন্য সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ  বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) গাযায় জেটি ও বন্দর নির্মাণ করতে চাচ্ছে । যদিও তা এখন অস্থায়ী বলা হচ্ছে আসলে ধীরে ধীরে সবাইকে বুঝিয়ে দেয়া হবে  যে এ ধরনের জেটি বা বন্দর  আসলে অস্থায়ী নয় বরং তা স্থায়ী ।  এ জেটি ও বন্দর গাজাবাসী দের স্বার্থে নয় । ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন ( হামাস ও জিহাদে ইসলামী ) এ ধরনের জেটি ও বন্দর নির্মাণের মধ্য দিয়ে মাযুরা যে সব জঘন্য সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে তা ব্যর্থ ও ভণ্ডুল করার চেষ্টা করবে। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের উচিত মাযুরার জঘন্য এ পদক্ষেপ ও উদ্যোগের বাস্তবায়ন হতে না দেওয়া এবং মিসর - গাযা সীমান্ত উন্মুক্ত করে সেখান দিয়ে (মাযুরার [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র] নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবমুক্ত হয়ে ) গাযায় ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালানো ।

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
captcha